১১ অক্টোবর ২০২৫ , ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা

নামাজের ফজীলত কী, কেন নামাজ পড়বেন

অনলাইন প্রতিবেদক
আপলোড সময় : ০৫-১০-২০২৫
নামাজের ফজীলত কী, কেন নামাজ পড়বেন
নামাজ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। নামাজ শুধু আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই নয়, বরং জীবনে শান্তি ও সাফল্যের অনন্য উপায়। যাদের নামাজে অবহেলা থাকে, তাদের জীবনে অশান্তি, দুশ্চিন্তা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। 
নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস অনুসারে, যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত এবং ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমত আদায় করে, আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেবেন, বিজলীর মতো পুলসিরাত পার করাবেন এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস:

ঈমান ও কুফরের পার্থক্য: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "একজন মুসলমান ও শির্ক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামায পরিত্যাগ করা। যে ব্যক্তি এ নামায ছেড়ে দিল সে কুফরী করল" (মুসলিম)।

কিয়ামতের দিনের হিসাব: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "কিয়ামতের দিন বান্দার আমলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে"।

জান্নাত লাভের পুরস্কার: যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করবে, আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন: (১) তার অভাব দূর করবেন, (২) কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেবেন, (৩) ডান হাতে আমলনামা দেবেন, (৪) বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার করাবেন এবং (৫) বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।


আল্লাহর স্মরণে: নামাজ আদায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর স্মরণে থাকা এবং তার নৈকট্য অর্জন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'আর তোমরা আমার স্মরণোদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম করো' (সুরা-২০ তহা, আয়াত: ১৪)।
ফজরের নামাজের গুরুত্ব: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম' (মুসলিম, হাদিস: ১৫৭৩)। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।

নামাজ পরিত্যাগ করলে কী হয়- 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি: ২৬২০; আবু দাউদ: ৪৬৭৮)


২. ধর্মীয় জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত
নামাজ মুসলমানদের জীবনযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সময়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে এবং মানুষের জীবনকে একটি ধর্মীয় কাঠামো প্রদান করে। নামাজ না পড়লে জীবন অগোছালো হয়ে যায় এবং সময়ের অপচয় হয়, ফলে জীবনে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ উত্তরসূরীরা। তারা নামাজ নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অন্তরবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৯)


৩. মানসিক অশান্তি ও দুশ্চিন্তা
নামাজ মানুষের মানসিক শান্তি এবং প্রশান্তি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যখন মানুষ নামাজ পড়তে থাকে, তখন তার মন ও মস্তিষ্ক স্নিগ্ধতায় ভরে যায়। নামাজের সময় আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ তাকে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। তবে নামাজে অবহেলা করলে, জীবন থেকে শান্তি দূর হয়ে যায় এবং মানসিক অশান্তি বাড়ে।
তাই কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)







৪. বিপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া
যে ব্যক্তি তার নামাজ পরিত্যাগ করে, তাকে জীবনে নানা ধরনের বিপদ, সমস্যা এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন- ১. জীবনের বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে। ২. চেহারা থেকে নূর ও জ্যোতি উঠিয়ে নেওয়া হবে। ৩. ভালো কাজ করলে তার সুফল ভোগ করতে পারবে না। ৪. দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন না। ৫. আল্লাহ ও ফেরেশতা অসন্তুষ্ট থাকবেন, ফলে মানসিক অস্থিরতা বিরাজ করবে। ৬. ইসলামের শান্তি ও প্রতিশ্রুতি থেকে বঞ্চিত হবে। (শারহুল আকিদাতুত তাহাবি: ২৬৮)। 
এক কথায়, নামাজ না পড়লে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ফলে জীবনে দুর্ভাগ্য এবং হতাশা বাড়ে।


৫. বিশ্বাসী সমাজে অসম্মান
নামাজ মুসলমানদের পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। যারা নামাজ পরিত্যাগ করে, তাদের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশ পালনের অনীহা দেখা যায়, যার ফলে পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্কেও অশান্তি ও অবিশ্বাস দেখা দিতে পারে। পরিবারে বিরোধ এবং সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। কারণ একটি ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুপস্থিতি মানুষের জীবনে অনেক ভুল ধারণা তৈরি করে।


৬. পাপ ও গুনাহের বৃদ্ধি
নামাজ হলো পাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নামাজের মাধ্যমে বান্দা তার গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভের আশায় থাকে। নামাজ না পড়লে, মানুষের জীবনে পাপ ও গুনাহের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যা তাদের অন্তরে অশান্তি এবং গ্লানি সৃষ্টি করে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষের গুনাহ মুছে ফেলে এবং তাকে পরিশুদ্ধ করে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬৪)


৭. জীবনে সফলতা ও বরকতের অভাব হয়
নামাজ মানুষের জীবনে বরকত এনে দেয়, যার ফলে জীবনে শান্তি, সাফল্য এবং উন্নতি আসে। যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন, তাদের জীবনে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং তারা সফলতা অর্জন করেন। তবে নামাজ না পড়লে, জীবনে সে বরকত এবং সাফল্য থাকে না, ফলে মানুষ হতাশাগ্রস্ত এবং অশান্ত হয়ে পড়ে। তাই মুমিন ব্যক্তির সফলতার জন্য নামাজের বিকল্প নেই।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই সেসব মুমিন সফলকাম হয়েছে; যারা তাদের নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত।’ (সুরা মুমিনুন: ১ ও ২)


কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ